
সুমন পালঃ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়ানোর পাশাপাশি পুষ্টির ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে নরসিংদী সহ সারাদেশে চালু হওয়া ‘স্কুল ফিডিং কর্মসূচি’ ইতোমধ্যেই শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। এই উদ্যোগ শুধু ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতির হারই বাড়ায়নি, শিক্ষাক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে বলে দাবি স্থানীয় সচেতন মহলের।
সারা দেশের ন্যায় নরসিংদীর বেলাবো উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে নিয়মিত স্কুল ফিডিং কর্মসূচির ফলে শিক্ষার্থীদের মাঝে ফিরে এসেছে প্রাণচাঞ্চল্য। খাদ্য বিতরণ চলছে। শিক্ষা বান্ধব খাদ্য কর্মসূচীর আওতায় ইতোমধ্যেই উপজেলার ৮৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ১৪ হাজার ৮৬০ জন ছাত্র-ছাত্রী পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন।
অন্যান্য উপজেলার চেয়ে অধিক গুনগতমানের ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য বিতরণ নিশ্চিত হওয়ায় বিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। একইসঙ্গে শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার হার কমে যাওয়ার পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মানসম্মত ও স্বাস্থ্যকর খাবার বিতরণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোনিবেশ বাড়াতে এবং পুষ্টির চাহিদা পূরণে এই প্রকল্পটি অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখছে। এই কর্মসূচির যথাযথ বাস্তবায়নে স্থানীয় প্রশাসন, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিবিড়ভাবে কাজ করছেন।
বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পেয়ে শিক্ষার্থীরা সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আমাদেরকে যে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে তা অত্যন্ত সুস্বাদু। খাবার দেওয়ার পর থেকে বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। তাই এ উদ্যোগটি সবসময় চালু রাখার দাবি জানান তারা।
অভিভাবকরা বলেন, এটি শুধু শিশুদের পুষ্টির চাহিদাই নিশ্চিত করছে না বরং তাদেরকে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসতে অনুপ্রাণিত করছে।
বেলাবো উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বেলাবো মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ নাসির উদ্দীন বলেন,ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভালো মানের খাবার সরবরাহ করার কারণে শিশুরা বিদ্যালয়ে আসতে উৎসাহিত হচ্ছে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মাঝে স্কুল ফাঁকি দেওয়ার যে প্রবণতা ছিল তা দুরীভূত হওয়ার পাশাপাশি বেড়েছে উপস্থিতির হার। এটি দেশের সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থার জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা বয়ে আনবে বলে ও জানান তিনি।
বেলাবো উপজেলা শিক্ষা অফিসার জুলেখা শারমিন বলেন, শিক্ষার্থীদের ঝড়ে পড়া রোধে এটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
বেলাবো উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুল করিম বলেন, স্কুল ফিডিং কর্মসূচি বেলাবো সহ সারা দেশের প্রাথমিক শিক্ষায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করে।তাই তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও পুষ্টির কথা বিবেচনা করে সরকার এ মহতী উদ্যোগ গ্রহণ করায় সরকারের ভুয়সী প্রশংসা করেন তিনি।
এই কর্মসূচিকে সফলভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সহযোগিতা এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা অব্যাহত থাকলে বেলাবো সহ সারা বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা সমৃদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে এমনটাই দাবি স্থানীয় সচেতন মহলের।