নিজস্ব প্রতিবেদকঃ নরসিংদীর করিমপুর বাজারে ইজারার টাকা আদায়ের নামে ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদাবাজি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে বর্তমান ইজারাদার সেলিম সরকারের বিরুদ্ধে ।
গত বুধবার (৩ মে) তাদের চাঁদাবাজির বিষয়ে করিমপুর বাজারের ব্যাবসায়ীদের পক্ষ থেকে বাজার কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপজেলা চেয়ারম্যানের নিকট একটি লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে ইজারা বাতিল করে নতুন করে ইজারা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
অভিযোগে বলা হয় যে, করিমপুর ইউনিয়নের করিমপুর বাজারের কিছু অসৎ ব্যক্তি অবৈধভাবে করিমপুর বাজারের দোকানদারদের কাছ থেকে মাত্রাতিরিক্ত ও এককালীন অর্থ আদায় করছে। প্রতি দোকানদারদের কাছ থেকে বিশ হাজার টাকা থেকে শুরু করে দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত আদায়ের পাশাপাশি প্রতিদিন ইজারার অর্থ আদায় করছে।কেউ টাকা দিতে ব্যর্থ বা অসম্মতি প্রকাশ করলে তাদের উচ্ছেদ করাসহ সাধারণ ব্যবসায়ীদের বাজার ছাড়া করার হুমকি প্রদান করছে।
এমতাবস্থায় করিমপুর বাজারের বর্তমান অবৈধ ইজারাদার ইসমাইল সরকার গংদের হাত থেকে সাধারণ ব্যবসায়ীদেরকে রক্ষা করার জন্য ইজারা বাতিল করে পুনরায় ইজারা দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানান।
এব্যাপারে জানতে সরেজমিনে করিমপুর বাজারে গিয়ে জানা যায়, ইসমাইল সরকার গং ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকায় করিমপুর বাজারের ইজারা নেয়। পরে বাজারটিকে ১৬ টি অংশে বিভক্ত করে প্রতি অংশ ৫০ হাজার টাকা করে ১৬ জনে মোট আট লাখ টাকায় কিনে নেয় । বর্তমানে তারা তাদের টাকা উঠানোর জন্য সেলিম মুন্সির নেতৃত্বে ব্যাবসায়ীদের অফিসে ডেকে নিয়ে বিশ হাজার টাকা থেকে শুরু করে শ্রেনী ভেদে দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত চাঁদা এককালীন পরিশোধ করতে ব্যাবসায়ীদের চাপ দিয়ে আসছে। অনেকে ভয়ে ইতিমধ্যেই তাদেরকে চাঁদার টাকা পরিশোধ করে দিয়েছে।
ব্যাবসায়ী শাহ্ আলম মিয়া বলেন, ইতিপূর্বে যারাই ইজারা নিয়েছেন তাদের কাউকেই এককালীন টাকা দিতে হয় নি। বর্তমানে সেলিম মুন্সি ইজারা নেওয়ার পর থেকেই আমাদের ফল ব্যাবসায়ীদের প্রত্যেককে বাজারে ব্যাবসা করতে হলে এককালীন ২০ হাজার করে টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দিয়ে আসছে।
ফরহাদ মিয়া বলেন, সেলিম মুন্সির নেতৃত্বে ৮/১০ জনের একটি দল আমাকে ১৮ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে গেছে। টাকা না দিলে নাকি এখানে ব্যাবসা করতে দিবে না।
আতশ আলী বলেন, আমাকে অফিসে ডেকে নিয়ে ২০ হাজার টাকা দিতে বলেছে । যদি টাকা না দেই তাহলে তারা নাকি আমার ছাপরাঘর ভেঙ্গে দেবে। আমি সামান্য ফল বিক্রেতা! একসাথে এত টাকা কোথায় পাব? ছেলে মেয়ে নিয়ে বর্তমানে খুব আতঙ্কে আছি। আমার ছাপরাঘর ভেঙ্গে দিলে ছেলে মেয়ে নিয়ে রাস্তায় বসা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
আব্দুল মান্নান বলেন, বিগত কয়েক দিন ধরে সেলিম মুন্সি ও তার দলবল আমার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা এককালীন ও দৈনিক ইজারার টাকার জন্য চাপাচাপি করে আসছে। তাদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা না দিলে তারা আমাকে ব্যাবসা করতে দিবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। আমরা আপনাদের মাধ্যমে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আমাদের প্রতি এ অন্যায় ও জুলুমের বিচার চাই।
করিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মমিনুর রহমান আপেল এর কাছে এব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কখন বা কবে করিমপুর বাজারের ইজারা হয়েছে তার কিছু্ই জানি না।
ইউপি চেয়ারম্যানকে চিঠি বা মৌখিকভাবে অবগত না করে স্থানীয় বাজারের ডাক(ইজারা) কিভাবে হয় তা আমার বোধগম্য নয় । এ ইজারা সম্পূর্ণ অবৈধ, বে-আইনি ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। তাই এ ইজারা বাতিল করে নতুন করে ইজারা দিতে উপজেলা চেয়ারম্যানের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
উপজেলা চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, করিমপুর বাজারের ইজারা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। ইজারা আহ্বানকালীন সময়ে যদিও আমি দেশের বাইরে অবস্থান করছিলাম কিন্তু আমার মুঠোফোন সার্বক্ষণিক খোলা ছিল। কেউ ফোন করে ও আমাকে ইজারার বিষয়টি জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি তাই ধরে নেয়া যায় এখানে কোন ভেজাল আছে।
তিনি আরো বলেন, এবিষয়ে ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে আমি একটি চিঠি পেয়ে ইজারার টাকা তোলা স্থগিত রাখতে চিঠি দিয়েছি।
ব্যাবসায়ীদের অভিযোগের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।