নরসিংদী মাধবদী প্রতিনিধি :-
মাধবদী থানার আমদিয়া ইউনিয়নের ভুইয়মের বাসিন্দার ওয়াজ শুনতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন মুক্তিযোদ্ধা পুত্র আব্দুল কাইয়ূম (৩৫)। ওয়াজ শুনে বাড়ি ফেরার পথে এলোপাথাড়ি মারধর ও গলা কেটে বাড়ির পাশ্ববর্তি নল্লার খালে তার লাশ ফেলে রাখে দুর্বৃত্তরা।
নিহত আব্দুল কাইয়ুম (৩৫) আমদিয়া ইউনিয়নের ভূইয়ম এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ’র ছেলে।
রবিবার (৩০ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে নরসিংদীর মাধবদী থানাধীন আমদিয়া ইউনিয়নের ভূইয়ম এলাকায় এ নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে।
এঘটনায় নরসিংদী জেলা,পিবিআই ও মাধবদী থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। মাধবদী থানা পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।
পুলিশ, নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়,নিহত আব্দুল কাইয়ুম ৫ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে তৃতীয়। পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে দীর্ঘ সাত বৎসর মালয়েশিয়ায় প্রবাস জীবন কাটিয়ে ৪ মাস পূর্বে বাড়ি ফেরে। গত এক মাস পূর্বে ধুমধাম করে বাড়ির পাশের স্মৃতি আক্তারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। গতকাল রবিবার বিকেলে বাড়ির অদূরে বেগুন ক্ষেতে পানি দেন। সন্ধ্যার পর থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত রুবেল মেম্বারের অফিসে সময় কাটিয়ে পাশ্ববর্তি বেলাব গ্রামে ওয়াজ শুনতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। সকালে বাড়ির অদূরে নল্লার খাল থেকে তার রক্তমাখা নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহতের ফুফু আমেনা খাতুন বলেন, আমার ভাতিজাকে তারা অনেক কষ্ট দিয়ে মেরেছে। তার সমস্ত শরীরে আঘাতের চিহ্ন। তাকে মারধর করার সময় মনে হয় সে হাত দিয়ে ফেরানোর চেষ্টা করেছে। তার হাত দুটোতে ও আঘাতের চিহ্ন। তারা তার গলাও কেটে ফেলেছে।মেহেদীর রং শুকাবার পূর্বেই যারা নির্মমভাবে আমার ভাতিজাকে খুন করে তার স্ত্রীকে বিধবা করেছে আল্লাহ তাদের উপযুক্ত বিচার করবে।
নিহতের পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ বলেন, গতকাল বিকেলে কাইয়ুম যখন বেগুন ক্ষেতে পানি দেয় তখন আমি তাকে তার স্ত্রীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে বলি। আমি ক্ষেতে পানি দিতে পারবনা বিধায় আমাকে ডাক্তারের কাছে পাঠায়।ডাক্তারের কাছ থেকে এসে রাতে তাকে খুঁজে না পেয়ে দোকানের দিকে গিয়ে খোঁজ করি। সেখান থেকে একজন বলে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত মেম্বারের অফিসে ছিল পরে ওয়াজ শুনতে গিয়েছে।
তার মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও ফোন বন্ধ পেয়ে খোঁজ নিতে ওয়াজ মাহফিলে যাই। সেখানে গিয়ে শুনি কিছুক্ষণ পূর্বে চটপটি বিক্রেতা আনোয়ারের কাছ থেকে সে পানি পান করেছে।
কিন্তু ওয়াজ মাহফিলের কোথাও তাকে খুঁজে পাইনি।পরে রাতেই বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্য রুবেলকে জানানো হয়। সারারাত এইভাবেই তাকে খোঁজা খুঁজি চলে। অবশেষে সকালে থানায় সাধারণ ডায়েরি করার জন্য বের হলে এলাকাবাসী নল্লার খালে কাইয়ুমের লাশ পড়ে আছে বলে জানায়।
কিন্তু কে বা কারা কি কারণে আমার ছেলেকে এমন নির্মমভাবে হত্যা করেছে আমি জানি না কিন্তু এর উপযুক্ত বিচার চাই।
স্থানীয় ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রুবেল বলেন, এব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান মিঠু ভাইয়ের সাথে কথা হয়েছে। তিনি অসুস্থ বিধায় আসতে পারে নি।
আব্দুল কাইয়ুম অনেক ভালো এবং কোন ধরনের রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত ছিল না। এঘটনার সাথে যারা জড়িত তদন্ত সাপেক্ষে তাদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি। একাধিকবার ফোন দিলেও আমদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ ইবনে রহিজ মিঠুর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এব্যাপারে জানতে মাধবদী থানায় গিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবং তদন্ত ওসি কাউকেই থানায় পাওয়া যায়নি। পরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দুজ্জামানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহতের স্ত্রী স্মৃতি আক্তার শোকে পাথর হয়ে পড়েছে। মেহেদীর রং শুকাবার পূর্বেই স্বামীকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি।