নাসিম আজাদ,পলাশ,নরসিংদীঃ
বিভিন্ন সমস্যায় জর্জড়িত একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার সংবাদ সংগ্রহের জন্য এতিমখানাটিতে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে হঠাৎ চোখ পড়লো, একজন বৃদ্ধ মনের সুখে হুক্কা টানছে।যা সচরাচর চোখে পরেনা।বৃদ্ধটির চোখেমুখে ছিল শুধুই হাসির ঝিলিক। আমার সঙ্গে ছিল ছোট ভাই সোহেল ভূইয়া। মোটর সাইকেলটি রাস্তার ধারে রেখে বৃদ্ধের কাছে গেলাম। সালাম দিলাম আর জিজ্ঞেস করলাম চাচা আপনার নাম কি?
আমার দিকে তাকিয়ে আবারও মুচকি হাসি।আমি চাচার কাছে একদমই অপরিচিত। পরিচয় দিলাম।এবার চাচা উত্তর দিলেন, আমার নাম নূরুল ইসলাম।বয়স ৬৫ হবে হয়তো। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। বিড়ি-সিগারেট খাইনা,৫০ বছর ধইরা হুক্কা খাই।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ঐসময় ভারতে গিয়ে তিন মাস ট্রেনিং নিয়ে দেশে এসে মুক্তিযোদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে দেশকে স্বাধীন করেছি। স্বাধীনতার পরে বিভিন্ন বাজার থেকে কলা এনে খুচরা বিক্রি করে কোন রকম সংসার চালাতাম। এখন বয়সের ভারে তা-ও ছেড়ে দিয়েছি। পিছনের ঘরটিতে রিকশা চালকরা রাতে রিকশা রাখে,এখান থেকে অল্প কিছু টাকা পাই। যা দিয়ে কোনো রকম আমাদের বুড়া-বুড়ির সংসার চলে। হুক্কা দেয়া-নেয়া করছেন আপনার পাশে বসা বুড়ো মানুষটি কে?আমার বড়ো ভাই, কেমন বড়ো ভাই? আপন বড়ো ভাই। জিজ্ঞেস করলাম চাচা আপনার নাম কি? সুরুজ মিঞা। আপনার বয়স কতো হবে? ৯০ এর কমনা। বিড়ি-সিগারেট কোন সময়ই খাইছিনা হোক্কাঐ টানি।
সংবাদ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন এলাকায় যেতে হয়, এভাবে হুক্কা টানার এমন দৃশ্য কখনো সচরাচর চোখে পড়েনি। আপনারা এটাকে কিভাবে ধরে রাখলেন? আমাদের বাপ-দাদারা খাইতেন, আমরাও খাই।কথোপকথনের মধ্যে দু’ভাই মনের সুখে হুক্কা টানছেইতো টানছে। এবার জানতে চাইলাম এই হুক্কাটির বয়স কতো? ২০০ বছরের কমনা,যেহেতু আমার দাদা খাইতেন। দেখে বুঝার উপায় নেই, হুক্কাটি এখনো নতুনের মতোই। সুরুজ চাচা, আপনিও কি মুক্তিযোদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন?হ্যা, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি মুক্তি যোদ্ধাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্থানীয় কিছু বাজার থেকে কলা এনে খুচরা বিক্রি করতাম এবং মানুষের জমিতে কাজ করতাম। এখন বয়সের ভারে কাজ করতে পারিনা, আর আমাদের খোঁজ খবরও কেউ রাখেনা।
শেষ প্রশ্নের উত্তরে জায়গাটির নাম জানলাম, মাঝেরচর কাঁঠালতলা। এটি নরসিংদীর পাঁচদোনা থেকে চরসিন্দুর যাওয়ার পথে, পলাশ উপজেলার জিনারদী ইউনিয়নে অবস্থিত।