মনিরুজ্জামান, বার্তা সম্পাদকঃ আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে নরসিংদীতে কৃষক ও খামারিরা জেলার চাহিদার দেড়গুণ প্রায় ৭৩ হাজার কোরবানির পশু প্রস্তুত রেখেছেন যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলায় ও যোগান দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছেন পশু খামারীরা।
হরমোন জাতীয় ইনজেকশন এবং কোন প্রকার রাসায়নিক ঔষধ প্রয়োগ না করে প্রতি বছরের মতো এবারও নরসিংদীতে খামারিরা সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া মোটাতাজা করেছেন।
শেষ মুহূর্তে এসে পশু পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারীরা। তাদের টার্গেট আসছে কোরবানির ঈদে পশুর ন্যায্য মূল্য পাওয়া।
তবে গো খাদ্যের চড়া দামে পশু লালন পালন করে এ মহামারি করোনায় ন্যায্য মূল্য পাবেন কিনা তা নিয়ে অনেকটা শঙ্কায় আছেন খামারিরা। তার পরও করোনার এ পরিস্থিতিতে সীমান্ত দিয়ে যদি দেশের বাইরের পশু আমদানি বন্ধ থাকে তাহলে ঈদের হাটে এসব পশু বিক্রি করে লাভবান হবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন পশু খামারীরা।
খামারি ও কৃষকদের ভাষ্য অনুযায়ী এবার গো-খাদ্যের দাম বাড়ার ফলে পশু লালন পালন খরচ অন্য বছরের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে।
জেলা পশুসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায় এবছর স্থানীয় খামারীরা তাদের খামারগুলোতে ৬০ হাজার ৯১০টি কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত রেখেছেন। আর ব্যক্তিগত ও কৃষক পর্যায়ে আরও ১২ হাজারের মত পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। যা কোরবানিযোগ্য পশুর চাহিদার তুলনায় প্রায় ১৮ হাজার বেশী। নরসিংদী জেলা কোরবানিযোগ্য পশুর চাহিদা ৫৫ হাজার। সেই ক্ষেত্রে কোরবানির জন্য পশু আমদানির প্রয়োজন হবে না বলে মনে করছেন জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
নরসিংদী জেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জেলার ৬টি উপজেলায় ছোট বড় মিলিয়ে ৬ হাজার ৭৬২ জন খামারি ৬০ হাজার ৯১০টি পশু পরিচর্যা করে কোরবানির জন্যে প্রস্তুতি করেছেন। এ সকল পশুর মধ্যে রয়েছে ষাড় ৩১ হাজার ৪০৭টি, বলদ ৯ হাজার ৮৫০টি, গাভী ৪ হাজার ৪৯২টি, মহিষ ১ হাজার ৫১৮টি, ছাগল ৯ হাজার ৬৫১টি, ভেড়া ২ হাজার ৯১৮টি ও অন্যান্য ৭৪টি।
এছাড়াও ব্যক্তিগত ভাবে কৃষকসহ সৃজনালী পশু পালনকারীরা কোরবানির জন্যে বিভিন্ন পশু লালন পালন করছেন প্রায় ১২ হাজার। তাই এবার স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানের পশু হাটেও এ সব পশু সরবরাহ করা যাবে বলে আশা করেছেন খামারিরা।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছরই ঈদের ৫ থেকে ৬ মাস আগে বাজার থেকে গরু-মহিষ কিনে দেশীয় খাবার দিয়ে কোরবানির পশু লালন পালন করে বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেন খামারিরা। অনেকে আবার ৮ থেকে ১০ মাস আগে থেকেই দেশের স্থানীয় হাট থেকে গরু-মহিষ ও ছাগল কিনে লালন পালন করছেন।
খামারিদের পাশাপাশি লাভের আশায় পারিবারিকভাবেও অনেক সৃজনারী কৃষক পশু মোটাতাজা করছেন। তবে এবার গো-খাদ্যের দাম একটু বাড়তি। তাই পশু পালনে খরচ বেড়েছে বলে জানান খামরিরা ও কৃষরা। এ সব খামারিরা গরুগুলো কোনো ধরনের ক্ষতিকর ওষুধ ও ভেজাল খাবার না খাইয়ে স্থানীয় জাতের ঘাস, খড়কুটো, ভুষি ও ছোলা খাইয়ে পশু মোটাতাজা করেছেন।
খামারিরা জানান, প্রতি বছরই ঈদ এলে গরু বিক্রি করে বাড়তি আয় করেন তারা। ছোট বড় খামারের পাশাপাশি কৃষকরাও ঈদকে সামনে রেখে গরু মোটাতাজা করে থাকেন। অন্যান্য বছর ক্রেতারা কোরবানীর একমাস আগে থেকে খামারীদের সাথে যোগাযোগ করতেন পছন্দের পশুটি কিনার জন্য এবার করোনায় সে অবস্থানটি নেই।
ঈদের বেশি দিন বাকী না থাকলেও ক্রেতাদের মিলছেনা কোন সারা। বাজারে নিলেও ক্রেতা মিলবে কিনা। ক্রেতা মিললেও ন্যায্য দাম পাওয়া যাবে কিনা। এসব নানাবিধ ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে খামারিদের মাথায়। সব মিলেই পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত নেই তাদের।
সৃজনাল খামারিরা বলছেন, তাদের পালিত পশুগুলোর বেশির ভাগই ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা মূল্যের। এ পশুগুলোর অধিকাংশই মধ্যবিত্তদের কাছেই চাহিদা পেতো। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে কারণে মধ্যবিত্তরাই রয়েছেন নানান সঙ্কটে। অনেকেই হয়ত এবার কোরবানি নাও দিতে পারেন। ফলে পশুর চাহিদা এবার কম থাকবে বলে মনে করছেন তারা।
রায়পুরা উপজেলা চরমধুয়া এলাকার গ্রীণ এগ্রো ফার্মসের মালিক আহসান শিকদার বলেন, এবার আমাদের খামারে দেশিয় জাতের ৯০টি গরু পালন করা হয়েছে। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে এসব গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। তবে দেশে করোনা সংক্রামণ যেভাবে বাড়ছে, তাতে কোরবানির পশুর দাম ও বাজার পরিস্থিতি কী হয় এ নিয়ে শষ্কায় আছি।
একই উপজেলার দড়িগাঁও গ্রামের কৃষক খুশি মিয়া বলেন, কোরবানি ঈদের হাটে বিক্রির জন্যে ৫ মাস আগে দুটি ষাড় কিনে লালন পালন করছি। গো-খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে গরু দুটি পালনে খরচ অনেক বেশি বেড়েছে। ন্যায্য দাম পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে আছি।