মোঃ নুর আলম:
নরসিংদী জেলার সড়ক-মহাসড়কগুলো যেন তরুণ মোটরসাইকেল আরোহীদের জন্য এক একটি মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। বেপরোয়া গতি, হেলমেট ব্যবহারে অনীহা এবং ট্রাফিক আইনের তোয়াক্কা না করার প্রবণতায় লাগামহীনভাবে বাড়ছে দুর্ঘটনা। গত ১৫ দিনেই জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘটা প্রায় ১০টি ছোট-বড় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ঝরে গেছে অন্তত ৬টি তরতাজা প্রাণ, গুরুতর আহত হয়েছেন ১৫ জনেরও বেশি। নিহত ও আহতদের বেশিরভাগের বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে, যা অভিভাবক ও সচেতন মহলকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটেছে শিবপুর উপজেলায়, যেখানে একটি দ্রুতগামী বাসের সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে প্রাণ হারান তিন বন্ধু—সাইফুল ইসলাম, আশিক মিয়া ও অপু মিয়া। একইভাবে, মাধবদী থানা এলাকায় দুর্ঘটনায় রাফিন গাজী (২২) নামের এক তরুণ নিহত এবং তার সঙ্গী মো. উদয় (২১) গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এছাড়া রায়পুরার আমিরগঞ্জ ও মনোহরদীর চালাকচর বাজারে পৃথক দুর্ঘটনায় আরও দুজন মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
গত ৯ জুন বিকেলে নরসিংদী নাগরিয়াকান্দী ব্রিজে দুটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে কমপক্ষে দুজন গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা জানান, বেপরোয়া গতিতে ওভারটেক করতে গিয়েই এই দুর্ঘটনা ঘটে।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা রোধে নিয়মিত অভিযান ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। হেলমেটবিহীন চালক ও বেপরোয়া গতির বিরুদ্ধে মামলাও দেওয়া হচ্ছে।
নরসিংদী জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে যারা হাসপাতালে আসছেন, তাদের একটি বড় অংশই মোটরসাইকেল আরোহী। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, বেশিরভাগ মৃত্যুর কারণ মাথায় গুরুতর আঘাত।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন তাদের মাসিক প্রতিবেদনে বারবার মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাকে দেশের সড়ক নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সংগঠনের তথ্যমতে, সারা দেশে মোট দুর্ঘটনার প্রায় ৪০-৪৫% মোটরসাইকেল কেন্দ্রিক। নরসিংদীর চিত্রটিও এর ব্যতিক্রম নয়।