কোরবানির মাসায়েল
১) প্রশ্ন : কোরবানি কার উপর ওয়াজিব?
উত্তর : প্রত্যেক সুস্থ জ্ঞান সম্পন্ন, প্রাপ্তবয়স্ক, মুসলমান, মুকীম, ধনী (এমন ধনী যার উপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব) ব্যাক্তির উপর কোরবানি ওয়াজিব। সূত্র: রদ্দুল মুহতার (ফতোয়ায়ে শামি- খন্ড: ৬, পৃষ্ঠা : ৩১২
২) প্রশ্ন : একজন ব্যাক্তির উপর কী পরিমাণ পশু জবাই করা ওয়াজিব?
উত্তর : একটি বকরি, ভেড়া বা দুম্বা অথবা উট, গরু বা মহিষের সাত ভাগের এক ভাগ। সূত্র : রদ্দুল মুহতার।
৩) প্রশ্ন : কোরবানির দিনে মুরগী বা হাঁস জবাই করার হুকুম কী?
উত্তর : কোন সমস্যা নেই তবে কোরবানির নিয়তে মুরগী বা হাঁস জবাই করা মাকরুহে তাহরীমী। সূত্র: ফতোয়ায়ে শামী
৪) প্রশ্ন : কোন ব্যাক্তি তার সন্তানাদি বা স্ত্রীর পক্ষ থেকে কুরবানি দিলে কি সহীহ হবে?
উত্তর : ওয়াজিব কুরবানির ক্ষেত্রে সন্তানাদি বা স্ত্রীর পক্ষ থেকে অনুমতি থাকলে সহীহ হবে অন্যথায় সহীহ হবে না। সুতরাং যদি কোন গরুর সাত ভাগের এক ভাগে কোন ওয়াজিব কোরবানিওয়ালার অংশ মিলানো হয় তার অনুমতি ছাড়া তাহলে কারো কোরবানি সহীহ হবে না। নফল কোরবানীর ক্ষেত্রে অনুমতি ছাড়াই সহীহ হবে। সূত্র: ফতোয়ায়ে শামী, ফতোয়ায়ে আলমগীরী।
৫) প্রশ্ন : কোন কোন দিন কোরবানি করা যায়?
উত্তর : ১০, ১১, ১২ জিলহজ্ব। অর্থাৎ ঈদের দিন ও তার পর ২ দিন। তবে প্রথম দিন কোরবানি করা উত্তম অতঃপর দ্বিতীয় দিন এরপর তৃতীয় দিন। সূত্র : সহীহ বোখারী, পৃষ্ঠা : ৮৩৫, রদ্দুল মুহতার- কিতাবুল উযহিয়্যা।
৬) প্রশ্ন : কুরবানী কার সাথে দেওয়া যাবে, আর কার সাথে দেওয়া যাবে না?
উত্তর : এমন প্রত্যেক মুসলমানের সাথে কুরবানি দেওয়া সহীহ যারা কুরবানির নিয়ত করে এবং হালাল মাল থেকে কুরবানি দেয়। উপরের তিনটি শর্ত যার মধ্যে পাওয়া যাবে না তার সাথে কোরবানি দেওয়া যাবে না। সূত্র : সহীহ বুখারী হাদীস নং ১, বাদায়েয়ূস সানায়ে।
৭) প্রশ্ন : যাদের সামর্থ্য নাই তাদের কি হাওলাত করে কুরবানী দেওয়া যাবে কিনা?
উত্তর : দেওয়া যাবে। তবে যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় তার জন্য করজ নিয়ে কুরবানী দেওয়া আবশ্যক নয়। আর যার উপর কুরবানী ওয়াজিব তার জন্য করজ নিয়ে কুরবানী করা আবশ্যক।
৮) প্রশ্ন: কত টাকার মালিক হলে কুরবানী তার উপর ফরজ হয়?
উত্তর: যে সুস্থ্য জ্ঞানসম্পন্ন, প্রাপ্তবয়স্ক, মুকীম, মুসলমান পুরুষ বা মহিলার মালিকানায় কোরবানীর দিনগুলোতে (১০,১১ ও ১২ জিলহজের সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত) ঋণের টাকা বাদ দিয়ে ৭.৫ তোলা স্বর্ণ বা ৫২.৫ ভরি রুপা অথবা এগুলোর মূল্য পরিমাণ টাকা হয় অথবা ব্যাবসার আসবাবপত্র বা জরুরতের থেকে অতিরিক্ত এ পরিমাণ আসবাব পত্র থাকে যার মূল্য ৭.৫ তোলা স্বর্ণ বা ৫২.৫ তোলা রুপার মূল্যের সমান হয় অথবা এগুলো সব মিলিয়ে এগুলোর মূল্য ৭.৫ তোলা স্বর্ণ বা ৫২.৫ তোলা রুপার মূল্য বরাবর হয় তাহলে এমন পুরুষ বা মহিলার উপর কোরবানী ওয়াজিব।
জরুরী আসবাবপত্র দ্বারা উদ্দেশ্য ঐ সকল আসবাবপত্র যা জীবন-যাপন ও সম্মান- সম্ভ্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট অর্থাত তা পূর্ণ না হলে প্রাণ ও মান-সম্মান চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে যেমন: পানাহার, পরিধানের পোষাক, থাকার ঘর, পেশাজীবী লোকদের পেশার যন্ত্রপাতি জরুরতের অন্তর্ভূক্ত।
আর জরুরতের থেকে অতিরিক্ত আসবাব পত্র দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ঐ সকল জিনিস যেগুলো মানুষ ব্যবহার করে না এবং কাজে আসে না। সূত্র : ফতোয়ায়ে শামী
৯) প্রশ্ন : কোরবানি কেনার পর যদি কুরবানির গরু হারিয়ে যায় তাহলে তার ওপর কি ফায়সালা?
উত্তর : ক্রেতা যদি গরীব হয় তাহলে কিছুই করতে হবে না। তবে যদি জন্তু পুনরায় ফিরে পায় কোরবানির দিনে তাহলে তা কোরবানি করবে আর যদি কোরবানির পরে অর্থাত ১২ জিলহজের পরে পায় তাহলে তা সদকা করে দিবে। আর যদি ধনি হয় তাহলে আরেকটি গরু ক্রয় করে কোরবানি দিবে যদি অন্য কোন জন্তু তার জন্য ক্রয় করা না থাকে। অন্য জন্তু ক্রয় করার পর যদি তা ফিরে পায় তাহলে তা ইচ্ছা করলে কোরবানি করতে পারবে (যদি কোরবানির সময় বাকি থাকে) অথবা বিক্রি বা পালতেও পারবে, তবে যদি বিক্রি করে বা প্রতিপালন করে তাহলে প্রথম (হারিয়ে যাওয়া) জন্তুর মূল্য দ্বিতীয় জন্তু থেকে বেশী হলে ঐ বেশী পরিমাণ মূল্য সদকা করে দিতে হবে। সূত্র : ফতোয়ায়ে শামি, বাদায়েয়ূস সানায়ে।
১০) প্রশ্ন: কোরবানির গরু কয় ভাগে ভাগ করতে হয়?
উত্তর: কোরবানির গরুর গোশত ভাগ করার কোন নির্দিষ্ট হুকুম নেই। তবে তিন ভাগ করে এক ভাগ নিজে রাখা, এক ভাগ আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের মেহমানদারির জন্য রাখা ও এক ভাগ গরীব মিসকিনকে দেওয়া উত্তম। বাদায়েয়ূস সানায়ে।
১১) প্রশ্ন: কুরবানীর গোশত কতদিন ফ্রিজে রেখে খেতে পারবে?
উত্তর : যে কয়দিন খুশি ফ্রিজে রাখতে পারবে। সূত্র : সহীহ বুখারী, ইবনে মাজাহ, বাদায়েয়ূস সানায়ে।
১২) প্রশ্ন : কোরবানি একা দেওয়া উত্তম না সাত জনে দেওয়া উত্তম? কিরকম গরু কুরবানী দেওয়া উত্তম?
উত্তর : গোশত বেশী হওয়া, মূল্য বেশী হওয়া, গোশত ভালো হওয়া। এই বিন্যাস অনুযায়ী কোরবানির পশু উত্তম। অর্থাত যে জন্তুর গোশত বেশী সেটা উত্তম, এরপর গোশত সমান সমান হলে যেটার মূল্য বেশী সেটা উত্তম। গোশত আর মূল্য সমান সমান হলে যেটার গোশত মানে ভালো সেটা উত্তম। সুতরাং যদি গরুর সাত ভাগের এক ভাগ একটি বকরি থেকে বেশী হয় তাহলে গরুর সাত ভাগের এক ভাগে শরীক হওয়া উত্তম তবে যদি বকরি ও গরুর সাতভাগের এক ভাগের দাম ও গোশতের পরিমাণ সমান হয় তাহলে বকরি কোরবানি দেওয়া উত্তম। আর কোন ধরনের গরু উত্তম হবে, সেটার ক্ষেত্রেও উপর সিরিয়াল ধর্তব্য। সূত্র: ফতোয়ায়ে শামী, ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া।
১৩) প্রশ্ন : কি কি পশু দিয়ে কোরবানি দেওয়া যায়?
উত্তর : এমন বকরী, ভেড়া, দুম্বা বা এ জাতীয় পশু যেগুলোর ১ বছর বয়স পূর্ণ হয়েছে তবে এমন ভেড়া বা দুম্বা যেগুলোর ৬ মাস পূর্ণ হয়েছে এবং এমন মোটা তাজা যা দেখতে এক বছরের মত দেখা যায় তা দ্বারাও কোরবানি সহীহ এবং এমন উট যার ৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। এমন গরু বা মহিষ যেগুলোর ২ বছর বয়স পূর্ণ হয়েছে। সবগুলোর ক্ষেত্রেই দাঁত উঠা আবশ্যক নয় বরং উল্লিখিত বয়স আবশ্যক। তবে এমন ক্রটি থেকে মুক্ত থাকতে হবে যা কোরবানির জন্য প্রতিবন্ধক যেমন : অন্ধ, খোড়া, অর্ধেকের বেশী কান কাটা বা লেজ কাটা, গোড়া থেকে সিং ভাঙ্গা, এমন দূর্বল যে হাড্ডির সম্পূর্ণ মগজ শুকিয়ে গিয়েছে ইত্যাদি। সূত্র : সহীহ মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ, ফতোয়ায়ে শামী, বাদায়েয়ূস সানায়ে।