শরীফ ইকবাল রাসেল,নরসিংদী:
নরসিংদীর নিকটতম একটি উপজেলা শিবপুর। এই উপজেলার দুলালপুর, মাছিমপুর ও এরপাশের এলাকায় কৃষি জমিতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে রাতে তোলা হয় বালু। তৈরি হয় বিশাল আকারের গর্ত। ক্রমাগতভাবেই শুরু হয় ভাঙন। আর সেই ভাঙনের শিকার হয় আশপাশের জমি ও ঘরবাড়ি। এরপর ভয় দেখিয়ে ফসলি জমি কিনে শুরু হয় মাটি ও বালু উত্তোলন। প্রশাসন কয়েকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলেও থেমে নেই বালু উত্তোলন। আগে বালু উত্তোলন করা হতো দিনের বেলায় এখন রাতে। পার্থক্য এটাই। কারণ দিনের বেলায় প্রশাসন আদালত বসিয়ে জরিমানা করেন। রাতের বেলায় তা সম্ভব হয়না। তাই এখন রাতের বেলায় দেদারছে উত্তোলন করা হয় বালু।
অনেকটা দাপটের সাথেই গভীর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত বালু উত্তোলনের মহোৎসবে মেতেছে বালুদস্যুরা। ফলে শত শত বিঘা জমি বিনষ্ট হচ্ছে। পরিবহনের অবাধ যাতায়াতে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়কও।
এভাবে বালু উত্তোলনের পলে কৃষি জমির সর্বনাশের পামাপাশি বসতবাড়ি, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা ধসে যাচ্ছে, হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। স্থানীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এসব ড্রেজার দিয়ে গ্রামাঞ্চলের খাল, বিল ও পুকুর থেকে যত্রতত্র ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন করায় আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী। বছরের পর বছর ধরে ড্রেজার মালিকেরা এসব অপকর্ম করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থায়ীভাবে বন্ধের কোনো লক্ষন দেখছেনা জনগণ। বিভিন্ন সময় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের বিষয়টি জানালেও তা কোনো কাজে আসছে না বলেও অভিযোগ এলাকাবাসীর।
স্থানীয়রা জানান, দুলালপুর ও মাছিমপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। মেশিনের মালিকগণ গ্রামের পরিত্যক্ত খাল, ডোবা ও পুকুর থেকে বালু উত্তোলন করছে। দুলালপুর ইউনিয়নের পেছনে চন্ডিবর্দী থেকে নন্দীরগাঁও সড়কের মধ্যবর্তী মির্জাকান্দী সরকারি সড়কের পাশের একটি মাছের ঘেরে অবৈধ ড্রেজার বসিয়েছে জাকির হোসেন ও সাদ্দাম হোসেন নামের স্থানীয় দুই ব্যক্তি। ঘের থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকিতে পড়েছে সরকারি সড়ক।
স্থানীয় কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, এলাকায় জমি কিনে মাটি ও বালু উত্তোলন করছে বালুদস্যুরা। এ কারণে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফসলি জমিও ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ ছাড়া সড়কের পাশের জমিগুলোতেও ট্রাক থেকে মাটি ও বালু পড়ে কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
দুলালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মেরাজুল হক মেরাজ জানান, সরকারি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে ফসলি জমি কেটে অবাধে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আর এসব মাটি পরিবহনের কারণে গ্রামীণ পাকা সড়ক নষ্ট হচ্ছে। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মাটি ও বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর দু-একদিন বন্ধ থাকলেও আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। এই যেনো চোর পুরিশের খেলা।
শিবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিন সাদেক জানান, ফসলি জমির মাটি কাটার কোনো সুযোগ নেই। জমির উপরিভাগের মাটি কাটার কারণে উর্বরতা শক্তি কমে যায়। আর বালু উত্তোলন করা হলে ধসে গিয়ে বড় বড় গর্ত হয়ে ফসলি জমি বিনষ্ট হবে। তাই যেকোনো মূল্যে কৃষি জমি রক্ষা করতে হবে। বিষয়টি সবাইকে গুরুত্বের সাথে দেখার অনুরোধ করেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কাবিরুল ইসলাম খান জানান, অনুমতি ছাড়া জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আইন অনুযায়ী দ-নীয় অপরাধ। তাই ফসলি জমি কেটে মাটি ও বালু উত্তোলন করার খবর পেয়ে একাধিকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। জরিমানাসহ বেশ কয়েকটি খননযন্ত্রও জব্দ করে ধ্বংস করা হয়েছে। একটি চক্র দুলালপুর ও মাছিমপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে গত সোমবার (৫ জুলাই) দুপুরে মাছিমপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত একটি ড্রেজার মেশিনে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। বালুসহ দুটি ট্রাক ও একটি ট্রলিসহ তিনজনকে আটক করা হয়। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন রোধে উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।