মনিরুজ্জামান, নরসিংদীঃ
নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ ইবনে রহিছ মিঠুর নেতৃত্বে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী আনোয়ার হোসেনের নির্বাচনী প্রচারণার মাইক, কেন্দ্র ভাংচুর ও কর্মীদের মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার (৬ মে) রাতে কান্দাইল এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাংচুর হওয়া ক্যাম্পের ভিতর মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। একই উপজেলার চেয়ারম্যান পদে আনারস প্রডীকের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মো. বাকিরের পক্ষ নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও তার সমর্থকরা এই হামলা করেন বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন।
ঘটনার ভুক্তভোগী, কাউছার মিয়া (৩২) নামে একজন জানান, আমদিয়া ইউনিয়নের কান্দাইল এলাকায় কাপ-পিরিচ মার্কার ভোট চেয়ে মাইকিং করার সময় মিঠু চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে তার লোকজন তাকে ব্যাপক মারধর ও তার ব্যাটারি চালিত অটো (ইজি বাইক) রিকশাটি ভাংচুর করে উল্টিয়ে গর্তে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করে। এছাড়াও এসময় তারা আশপাশের কাপ-পিরিচের ক্যাম্পগুলোতেও হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে।
কাপ-পিরিচ প্রতীকের স্থানীয় সমর্থক ও আমদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন ভুঁইয়া ভূইয়া রিপন বলেন, আমদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান একটি পক্ষ নিয়ে বিভিন্নভাবে তার সন্ত্রাস বাহিনী দিয়ে এলাকার সাধারণ ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টির পায়তারা করছে। এরই ফলশ্রুতিতে তারা সোমবার রাতে হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। তার এই দৌরাত্ম্য প্রতিরোধ করা না গেলে নির্বাচনের স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত হবে বলে তারা জানান।
এই ঘটনায় কাপ-পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থী নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় ভেবে সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছেন। তিনি আমদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে আমার কাপ-পিরিচ এর কর্মী সমর্থকদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও মারধর করিয়েছেন এবং তার দলবল দিয়ে আমার একাধিক ক্যাম্প ভাংচুর করিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আমাদের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে তারা প্রতিনিয়ত বাঁধা সৃষ্টি করে সাধারণ ভোটারদের মাঝে ভীতি ছড়ানোর চেষ্টা করছেন, যা চলতে দেয়া যায়না।
হামলার ব্যাপারে তিনি বলেন, সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আব্দুল বাকির এর সমর্থক স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ ইবনে রহিছ মিঠুসহ তার সন্ত্রাসীবাহিনীরা কাপ-পিরিচ প্রতীকের নির্বাচনী প্রচারণার মাইক, অটো রিকশা, কয়েকটি ক্যাম্প ভাংচুর সহ কর্মীদের মারধরের খবরে তিনি ওই এলাকায় ছুটে যান এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে খবর দেন। সাথেসাথে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহ মাধবদী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। এ বিষয়ে মাধবদী থানায় ইউপি চেয়ারম্যান মিঠু সহ ১৭ জনের নামোল্লেখ করে এবং ১৫/২০ জন অজ্ঞাত নামে অভিযোগ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, নির্বাচণী প্রচারণার সময় গণ্ডগোলের খবর পেয়ে আমরা ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। দুই পক্ষ দুই দিকে অবস্থান নেয়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। এব্যাপারে অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
এব্যাপারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: সাইফুল ইসলাম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রচারণায় কাপ-পিরিচ ও আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর কর্মীদের মাঝে ঝামেলার খবরে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তবে খুব বড় ধরনের কিছু হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন আমরা যতক্ষণ ছিলাম পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিলো। এছাড়া নির্বাচনের স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে তারা সচেষ্ট রয়েছেন বলেও জানান।
নরসিংদী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিউল আলমের কাছে এব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোনো খবর পাননি বলে জানান।
এদিকে, এ ঘটনায় আনারস প্রতীকের প্রার্থী ও সমর্থকদের একাধিকবার কল করলেও রিসিভ না করায় কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
# মনিরুজ্জামান
নরসিংদী