প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪, ১:৪৪ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুন ২৮, ২০২১, ১:১৯ পি.এম
মনিরুজ্জামান,বার্তা সম্পাদকঃ শিল্প সমৃদ্ধির পাশাপাশি নদী ও পরিবেশ দূষণের দিক দিয়ে নরসিংদী বাসি শীর্ষস্থান দখল করে আছে। নদীর সাথে নরসিংদীর মাটি ও মানুষের গভীর মিতালী রয়েছে। শিল্প সমৃদ্ধ এই জেলার বুক বেয়ে এঁকে বেঁকে বয়ে গেছে ছয়টি প্রসিদ্ধ নদী। নদীকে কেন্দ্র করে এ জেলায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য ছোট-বড় কলকারখানা।আর এসকল কলকারখানার বর্জ্যে প্রতিনিয়ত নদী দূষণের ফলে নদীগুলো আজ ধীরে ধীরে তাদের স্বাভাবিক নাব্যতা হারিয়ে বিলীনের পথে। নরসিংদী শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া হাড়িধোয়া নদীর পুন:খনন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু নদী খননের এসময়েও কমছেনা নদী দূষণ। কলকারখানার বর্জ্য,ক্যামিকেল মিশ্রিত বিষাক্ত পানি,পৌর এলাকার যাবতীয় ময়লা-আবর্জনা ও বাজারের পরিত্যক্ত ময়লাসহ নদী পাড়ের মানুষ নির্বিচারে নদীতে আবর্জনা ফেলে প্রতিনিয়ত নদীর পানি দূষিত করে যাচ্ছে। এতে করে চরম ভাবে নদী দূষণের পাশাপাশি পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।এতে করে নদীর পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে মিঠা পানির মাছ আজ অস্তিত্ব বিলীনের পথে।
২০১৮ সালে নরসিংদীর আড়িয়াল খাঁ, হাড়িধোয়া, ব্রক্ষপুত্র, পাহাড়িয়া, মেঘনা ও পুরাতন ব্রক্ষপুত্র নদসহ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ছয়টি নদী পুন:খনন প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। বর্তমানে এ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। প্রায় কিছু মাস আগে শহরের হাড়িধোয়া নদী দূষণমুক্ত করতে কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু এরপরও কমেনি দূষণ। পুরাতন থানার ঘাট থেকে হাজিপুর ব্রীজ, নরসিংদী বড় বাজার, বীরপুর ও আরশিনগর এলাকার চারপাশ থেকে হাড়িদোয়া নদীতে ফেলা হচ্ছে ময়লা আবর্জনা। পাশাপাশি করখানার বিষাক্ত কেমিক্যাল পানিতে মিশে একাকার হচ্ছে।এলাকাগুলোর অংশে হাড়িদোয়া নদীর পানি দূর্গন্ধ যুক্ত, ময়লা ও বিষাক্ত কেমিক্যাল যুক্ত হওয়ায় এর পানির রং খুবই বিশ্রী।.
হাড়িধোয়া নদীর তীরে গড়ে উঠেছে নরসিংদী বাজার। এ বাজারে প্রায় ২ হাজারের উপর দোকান রয়েছে। বাজারের এ সকল দোকানপাট থেকে বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা প্রতিনিয়ত নদীতে ফেলা হচ্ছে। পরিত্যক্ত ময়লা আবর্জনা নদীর পাড়ের বিভিন্ন অংশে বিশাল জায়গাজুড়ে ছোট-বড় টিলার মতো স্তুপ হয়ে আছে । মুরগির রক্ত, বিষ্টা, পলিথিনে মোড়ানো পঁচা তরি তরকারিসহ নানা আবর্জনা।
এছাড়াও প্রতিদিন নদীর পাড়ের মানুষ তাদের বাসা-বাড়ি থেকে নদীতে ময়লা ফেলছে। যার কারণে পূণরায় নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে নদীর পাড় দখল করে কিছু ঘরবাড়িও তৈরি হয়েছে।
অপরদিকে হাড়িধোয়া নদীতে শহরের ছোট বড় মিলকারখানার বিষাক্ত কেম্যিকেল যুক্ত বর্জ্য, পানি এসে পড়ছে। মিশে যাচ্ছে নদীর জলের সাথে। নদীর একসময়ের স্বচ্ছ পানি এখন আলকাতার রং ধারণ করেছে। প্রাণ হারাচ্ছে জলজ প্রানী। অস্তিত্ব বিলীনের পথে মিঠা পানির মাছ। বিষাক্ত নদীর পানি মানুষের ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পরেছে। বাড়ছে দূষণ, ছড়িয়ে পড়ছে রোগ-ব্যাধি।
হারাধন দাস নামে নরসিংদী বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, আগে এতো কলকারখানাও ছিলো না নরসিংদীতে এতো মানুষের বসবাসও ছিলনা। সে সময় হাড়ীধোয়ার পানি একদম স্বচ্ছ ছিল। আমরা প্রতিদিন এ পানিতে গোসল করতাম। আর হাড়িধোয়ার মাছ খুব সুস্বাদু ছিল। এখন এ নদীতে কোন মাছতো দূরের কথা ব্যাঙ ও নেই। বিষাক্ত বর্জ্যে সব মরে গেছে।
জুবায়ের হোসেন নামে একজন বলেন, মাঝে মধ্যে বাজারের পাশে হাজীপুরের এই ব্রিজে একটু বাতাস খেতে আসতাম কিন্তু বাতাসে ভেসে আসা নদীর পানির পচা দূর্গন্ধে এখন আর এখানে বসা যায় না।।
মাধব সাহা নামে অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে হাড়িধোয়ার পানি। একদিকে কলকারখানার বিষাক্ত ক্যামিক্যাল ও রং মিশ্রিত পানি অপরদিকে এই বিশাল বাজারের ময়লা ও পচা জিনিসপত্র ফেলা হচ্ছে নদীতে। তাছাড়া এ এলাকার মানুষের বাড়ী-ঘরের ময়লা আবর্জনাতো আছেই। নদীপাড়ের মানুষগুলো যেন নদী দূষণের প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
নরসিংদী বাজার থেকে নদীতে ময়লা ফেলা বন্ধের ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বণিক সমিতির সভাপতি বাবুল সরকার বলেন, আমরা নদীতে ময়লা আবর্জানা ফেলা বন্ধে সকল ব্যবসায়ীদের ডেকে সভা করেছি। যেখানে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রশ্ন ওঠে বাজারের এই ময়লা তাহলে কোথায় ফেলা হবে। এব্যাপারে পৌর মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। তাছাড়া সাময়িক ভাবে নদীতে ময়লা ফেলা বন্ধে বেড়িবাঁধের উপর বাঁশ বেঁধে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা হয়েছে কিন্তু সেটাও ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।
শহরের পৌর মেয়র আমজাদ হোসেন বাচ্চু বলেন, কোন ভাবেই নদীতে ময়লা ফেলা যাবে না। পৌরসভার দেয়া নির্দিষ্ট স্থানে সবাইকে ময়লা ফেলতে হবে। তিনি বলেন, যদি কেউ শহরের পরিবেশ নষ্টে এ নিয়ম অমান্য করে তবে পৌর বিধান মোতাবেক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এব্যাপারে নরসিংদী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র শংকর চক্রবর্তী ও নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোঃ হূমায়ুন কবিরকে একাধিকবার ফোন দিয়ে ও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।